সপ্তস্তর বিশিষ্ট আসমান ও পৃথিবীর ক্রমবিকাশে চারটি ধাপ


সপ্তস্তর বিশিষ্ট আসমান

তিনিই সে সত্তা (আল্লাহ) যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্যে যা
কিছু রয়েছে জমিনে, অতঃপর তিনি মনসংযোগ করেছেন আকাশের
প্রতি। বস্তুত তিনি তৈরি করেছেন সাত আসমান। আর তিনি
সর্ববিষয়ে অবহিত। (বাকারা, ০২ : ২৯)

আর আমি তোমাদের ওপর সৃষ্টি করেছি সপ্তপথ। (মুমিনূন, ২৩ :
১৭)

আর আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ওপর মজবুত সপ্ত আকাশ।
(নাবা, ৭৮ : ১২)

এই আয়াতগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রহস্য হয়েই থেকে গেছে।
এমনকি এই বিজ্ঞানের যুগের মানুষদের কাছেও। সাম্প্রতিক সময়ে একজন
তুর্কি মহাকাশ বিজ্ঞানী ডক্টর হালুক নূর বাকি মহাকাশ বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক
গবেষণার ভিত্তিতে এই আয়াতগুলির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন,
যে মহাশূন্য আমাদের পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে তা নিমড়বলিখিত সাতটি
সমকেন্দ্রিক চৌম্বক স্তরে গঠিত।

১. মহাশূন্যের যে ক্ষেত্র সৌরজগত দ্বারা গঠিত তা প্রথম আসমানের
প্রতিনিধিত্ব করে।
২. সম্প্রতি ‘মিল্কিওয়ে’ বা আকাশগঙ্গার চারপাশে একটি চৌম্বক
ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আমাদের ছায়াপথের এই বিস্তৃত ক্ষেত্রটি
দ্বিতীয় আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।
৩. ছায়াপথসমূহের ‘Local Cluster’ মহাকাশীয় ক্ষেত্র তৃতীয়
আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।
৪. ছায়াপথসমূহের সমন্বয়ে গঠিত মহাবিশ্বের কেন্দ্রীয় চৌম্বক ক্ষেত্র
চতুর্থ আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।
৫. অতি দূর থেকে আগত আলোকতরঙ্গের উৎসসমূহের
প্রতিনিধিত্বকারী মহাজাগতিক বলয় পঞ্চম আসমানের প্রতিনিধিত্ব
করে।
৬. মহাবিশ্বের প্রসারমান ক্ষেত্র ষষ্ঠ আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।
৭. মহাবিশ্বের প্রান্তহীন অসীমত্বের নির্দেশক সর্ববহিরস্থ ক্ষেত্র সপ্তম
আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

আসমানের এই স্তরসমূহ অকল্পনীয় স্থান জুড়ে আছে। প্রথম আসমান স্তরের
পুরুত্ব আনুমানিক ৬.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। দ্বিতীয় স্তর তথা আমাদের
ছায়াপথের ব্যাস হল ১৩০ হাজার আলোকবর্ষ। তৃতীয় স্তরের বিস্তার ২
মিলিয়ন আলোকবর্ষ। চতুর্থ স্তরের ব্যাস ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। পঞ্চম
স্তরটি ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে। ষষ্ঠ স্তরটি অবস্থিত ২০ বিলিয়ন
আলোকবর্ষের দূরত্বে। একথা বলা বাহুল্য যে, সপ্তম স্তরটি বিস্তৃত হয়ে
আছে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত। সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা সেই আল্লাহ
তাআলার জন্যে যিনি এই সুবৃহৎ ও অসীম মহাবিশ্বের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও
পালনকর্তা। এই হল সেই সপ্তস্তর আসমান যার ঘোষণা দিয়েছে কুরআন
মাজিদ আজ থেকে চৌদ্দশ বছর পূবে।

পৃথিবীর ক্রমবিকাশে চারটি ধাপ

আর তিনি পৃথিবীর উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন
এবং তাতে বরকত দান করেছেন এবং চারদিনের(চারটি সুষম সময়) মধ্যে তাতে
তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন, তাদের জন্যে (তথ্যস্বরূপ) যারা
জিজ্ঞাসা করে। (ফুসসিলাত, ৪১ : ১০)

বর্তমান বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর ইতিহাসকে নিম্নবর্ণিত প্রধান চারটি ভাগে
বিভক্ত করেন
১. Pre-Cambrian যুগ : ৬০০ থেকে ৩৩০০ মিলিয়ন বছর। এই
যুগে পৃথিবী তার আদি পিণ্ড থেকে বিকশিত হয় এবং একটি স্বতন্ত্র
গ্রহের রূপ ধারন করে। জীবনের প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্যের মাধ্যমে এ
যুগের সমাপ্তি ঘটে।
২. Palezoic যুগ : ২৩০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন বছর। এই যুগে
সর্বপ্রথম ভূমিজ লতা-পাতা, উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ দৃষ্টিগোচর
হয়। এটি হল প্রাচীন প্রাণ যুগ।
৩. Mesozoic যুগ : ৬৩ থেকে ২৩০ মিলিয়ন বছর। এটিকে
মধ্যপ্রাণ যুগ বলে বিবেচনা করা হয়। মৌসুমী পরিবর্তনের সঙ্গে
বৃক্ষ-লতা ভালভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছিল। মেরুদণ্ডী প্রাণী, স্ত
ন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিও এ যুগে গোচরীভূত হয়। আর
ডাইনোসর ছিল প্রচুর।
৪. Conozoic যুগ : বর্তমান সময় থেকে ৬৩ মিলিয়ন বছর। এই
যুগ জীবনের বর্তমান ধাপকে অন্তর্ভুক্ত করে।

পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসকে এই চার ভাগে বিভাজন অবিন্যস্ত কিংবা
বিশৃঙ্খল নয়, বরং তা করা হয়েছে দৈহিক গঠন প্রক্রিয়ার ক্রমবিকাশের
সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে। এই যুগগুলি বিশ্ব বিস্তৃত পারস্পরিক সম্পর্কের
ভিত্তি হিসেবে সার্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছে। এগুলি প্রাণীজগৎ ও
উদ্ভিদজগতের ক্রমোন্নতি এবং মহাদেশগুলির গতিপ্রবাহ, মহাসাগর ও
পর্বতমালার রূপ পরিবর্তনের রেকর্ডেরও প্রতিনিধিত্ব করে। এটিই সম্ভবত
সেই চার যুগ যা কুরআন মাজিদ বর্ণনা করে।

‘এবং তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীর উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন
করেছেন……….তাতে খাদ্যের সংস্থান করেছেন চারদিনের মধ্যে (চারটি
সুষম সময়ের মধ্যে)।’

এখানে লক্ষণীয় যে, পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের এই চারটি সময়কাল
আকাশ, পৃথিবী ও পুরো মহাবিশ্ব সৃষ্টির ছয় সময়কাল থেকে ভিন্ন। সেগুলি
অতীত হয়ে গেছে পাঁচ বিলিয়ন বছরেরও অধিককাল পূর্বে যেখানে
মহাবিশ্বের বয়স বর্তমানে ১০ বিলিয়ন বছরেরও অধিক।

মূলঃ আল-কুর’আনের ১৬০ মুজিজা ও রহস্য

This entry was posted in কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান. Bookmark the permalink.

2 Responses to সপ্তস্তর বিশিষ্ট আসমান ও পৃথিবীর ক্রমবিকাশে চারটি ধাপ

  1. RIAZ বলেছেন:

    জেনে খুব ভাল লাগল

  2. Ashik বলেছেন:

    apnake onek onek thanks ei osadhoron informatiom share korer jonno. jodi somoy & sujog pan tobe nastik soitan guli ke ektu kosto kore jobab deben. ora bivinno blog e quraner ei sob scientific information neye thatta bidrup kore.
    zajakallahu

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান