ইসলাম কি সহনশীলতা সম্পর্কে কোন উপদেশ বা শিক্ষা দেয়?

প্রশ্নঃ শুভ সন্ধ্যা,স্যার। আমি টিয়া অনুরাগী,আইন শেষ বর্ষের ছাত্রী।আমার ধারণা সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা যায়।যদি মানুষকে সহিষ্ণুতা শেখানো যায়,নিদেন পক্ষে সন্ত্রাসবাদ কমানো যায়।ইসলাম কি সহনশীলতা সম্পর্কে কোন উপদেশ বা শিক্ষা দেয়? আর যদি দিয়ে থাকে তাহলে যে মানুষগুলির উপর ইসলামের এ দায়িত্বগুলি রয়েছে[আমি আসলে শদগুলির(নামগুলির) সাথে পরিচিত না।যেমন হিন্দু ধর্মে গুরুরা আছেন] যারা ইসলাম সম্পর্কে উপদেশ/শিক্ষা দেন অন্য মুসল্মানদের তারা কি সহনশীলতা সম্পর্কে কোনও শিক্ষা দেন?

উত্তরঃ

ডা যাকির নাইকঃ বোন, আপনি সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন।আপনি ঠিকই বলেছেন যে, সহনশীলতার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ কমানো যায়।আর ইসলাম সহনশীলতার শিক্ষা দেয় কিনা? বোন,আমার বক্তৃতায় বলেছি যে, যে কোন মানুষের জন্য জান্নাত বা স্বর্গে যাবার যেতে হলে অনেকগুলি শর্তের মধ্যে একটি হল সহনশীলতা। পবিত্র কুর’আনে সূরা আল-আসরে ১-৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

“মহাকালের শপথ,

মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত,

শুধু তারা ছাড়া যাদের ঈমান আছে, সৎ কর্ম করে,যারা মানুষকে সত্য ও ধৈর্য্যের(সহনশীলতার) উপদেশ দেয়।”

মানুষকে সত্য আর সহনশীলতার উপদেশ দেওয়া হল দাওয়াহ। সহনশীলতা হল জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম শর্ত। আপনি যদি সহনশীল না হন তাহলে সূরা আসর অনুযায়ী আপনি জান্নাতে যেতে যেতে পারবেননা। শুধু সহনশীল হলেই চলবে না,অন্য মানুষকে সহনশীলতার পথে আনতে হবে। তবে “সহনশীলতা” শব্দের অনেক রকম অর্থ করা যায়। আর বিশেষজ্ঞরাও বলবে যে,সহনশীলতার একটা সীমা আছে।

সহনশীলতা বলতে আপনি কি বোঝেন?

কেউ যদি আপনার সাথে অন্যায় কিছু করে আপনি প্রতিশোধ নিলেন না, খুব ভালো।কিন্তু কতদিন করবেন? তাই সহনশীলতার একটা সীমা আছে।আর ইসলাম ধর্মে জালিম সেই লোক যার কাজ জুলুম করা। অর্থাৎ আপনি বলতে পারেন যে, যে লোক সবার ক্ষতি করে সেই জালিম।জুলুম ২ প্রকারের রয়েছে। একজন অন্য মানুষের ক্ষতি করে আর একজন নিজের নিজের ক্ষতি করে।এই ২ প্রকারের লোককেই জালিম বলা হয়।আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্ললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,যেটা সহীহ মুসলিমে উল্লেখ আছে যে,

“যদি তোমার সামনে অন্যায় কিছু ঘটে আর যদি তোমার সামর্থ্য থাকে তাহলে সেটা হাত দিয়ে প্রতিহত কর।যদি তা না পার তবে তমার জিভ দিয়ে প্রতিহত কর।আর যদি তাও না পার তবে মনে মনে ঘৃণা কর।আর এটা হল সবচেয়ে দূর্বল প্রকৃতির ঈমান।”

তাই আমাদের কি করতে হবে?-আমাদের সহনশীল হতে হবে।সহনশীলতার শিক্ষা দিতে হবে।যেমন আল্লাহ পবিত্র কুর’আনে সূরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে বলেছেন-

উচ্চারণঃ ইন্নাল্লা-হা মা আস ছ্বা-বিরি-ন।

“নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”

তবে সবুরেরও একটা সীমা আছে।যদি আপনি দেখেন একজন মহিলাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, আপনি ঐ মহিলাকে বলতে পারেবেননা সহ্য করুন সমস্যা নেই।যদি স্রষ্টা আমাকে শক্তি দিয়ে থাকেন তবে আমি আমার হাত দিয়ে সেটা বন্ধ করব।যদি না পারি তাহলে বলব, আরে ভাই ,দয়া করে এসব করবেননা।

মুম্বই তে একটি খবর বেরিয়েছিল যে,একটা ১৩ বছরের বাচ্চা মেয়েকে চলন্ত ট্রেনে একটা মাতাল ধর্ষণ করেছে ,সেখানে ৫ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র একজন একটু আপত্তি তুলেছিল আর সবাই তাকে বাধা দিয়েছিল। পাঁচজন মানুষ ইচ্ছা করলেই একজন মাতালকে ঠেকাতে পারত।মাতালটা একটা পাঁড় মাতাল আর তারা কিছুই করল না।

মানবতার আজ হয়েছেটা কি? মানুষ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? পাঁচ জন সুস্থ সবল মানুষ একটা মাতালকে ঠেকাতে পারলনা যে একটা মেয়েকে চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণ করছে। এটাকে কি আপনি সহনশীলতা বলেন? আমি বলব কাপুরুষতা। সেজন্য আমি বলছি, যদি এ পাঁচজন লোক terrorist হত,terrorist মানে who terrorizes anti social elements তাহলে ওই মাতাল লোকটা একাজ করার সাহস পেত না।

তাহলে বোন আমরা মানুষকে উৎসাহ জোগাতে চেষ্টা করব যাতে মানুষ আরও সহনশীল হয়,একইসঙ্গে তারা যেন কাপুরুষ না হয়।আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, অসামাজিক/অনৈতিক যা কিছু আছে তা যেন কমে যায়। এ ব্যপারে আমাদের সবাইকে একসাথে চেষ্টা করতে হবে যাতে লোকগুলি অসামাজিক/অনোইতিক/অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে।

This entry was posted in প্রশ্ন উত্তর. Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান